আজ বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হিসেবে নতুন দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বাহারুল আলম। পুলিশ সদর দপ্তর এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। বাহারুল আলমের নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনটি গতকাল বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত হয়, যার মাধ্যমে তিনি আইজিপি পদে মো. ময়নুল ইসলামের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বাহারুল আলম বাংলাদেশ পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) হিসেবে আইজিপি পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছেন। সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৪৯ ধারা অনুযায়ী, তাকে আইজিপি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে এই নিয়োগে এক বিশেষ শর্ত রয়েছে, যা হলো, বাহারুল আলমকে অন্য কোনো পেশা, ব্যবসা কিংবা সরকারি, আধা সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগ করতে হবে। তার নিয়োগের মেয়াদ হবে দুই বছর।
বাহারুল আলমের দীর্ঘ কর্মজীবন একটি অত্যন্ত সমৃদ্ধ ইতিহাস। তিনি ২০০৭-০৮ সালে এসবিপ্রধান (বিশেষ শাখা) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং পুলিশ সদর দপ্তরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন। ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরের শান্তি রক্ষা বিভাগে পুলিশ লিয়াজোঁ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন, যেখানে তিনি আন্তর্জাতিক শান্তি মিশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ২০১৫ সালে আফগানিস্তানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের সিনিয়র পুলিশ অ্যাডভাইজার হিসেবে কাজ করেন বাহারুল আলম। এর আগে ক্রোয়েশিয়া, সার্বিয়া, কসোভো ও সিয়েরা লিওনে দায়িত্ব পালন করে তিনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করেন।
এছাড়া, বাহারুল আলম ২০২০ সালে পুলিশের চাকরি থেকে অবসর নেন, তবে তার অবসর গ্রহণের পরেও তার নাম বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা মিশন এবং পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে পরিচিত ছিল।
বাহারুল আলমের আইজিপি হিসেবে নিয়োগ বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীর জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পুলিশ বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। তৎকালীন আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুন গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন, যার ফলে পুলিশ বাহিনীতে শূন্যস্থান তৈরি হয়। এই সময়ে বেশিরভাগ অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হয়।
বাহারুল আলমের নিয়োগের মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীতে নতুন নেতৃত্ব আসায় বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। বাহারুল আলম তার দীর্ঘ অভিজ্ঞতার আলোকে পুলিশের কার্যক্রমকে আরও তৎপর এবং আধুনিক করার পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে। তার নিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনীতে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও উন্নতির সম্ভাবনা উন্মোচিত হতে পারে।